মাধ্যমিকের বইয়ে ভুল সংশোধন
নিজস্ব প্রতিবেদক : মাধ্যমিকের বইয়ে প্রায় অর্ধশত ভুল সংশোধনের দায়সারা উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। স্কুলে স্কুলে ভুলের তালিকা পাঠিয়ে হাতে-কলমে ঠিক করার কথা ভাবছে তারা। তবে সনাতন পদ্ধতির এ সংশোধন প্রক্রিয়া কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন শিক্ষা গবেষকরা। আর মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতিসত্তার বিষয়ে ভুলের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র থাকলে তা উন্মোচনের দাবি তাদের।
বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে কোটি কোটি নতুন বই তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সারা বিশ্বে নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। তবে প্রতি বছরই বাঙালি জাতিসত্তা, বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে পাঠ্যবইয়ে থাকা নানা ভুল এ অর্জনকে করে সমালোচিত।
প্রতি বছরই সংশোধন প্রক্রিয়ায় হয় দায়সারার মতো কাজ। নতুন শিক্ষাবর্ষ আসলে আবারও হয় একই বিষয়ে ভুল। চলতি শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে থাকা নানা ভুল সংশোধনের কাজ শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। ভুলের সংশোধনী সংবলিত একটি নির্দেশনা প্রস্তুত করে তা বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেই নির্দেশনা অনুসারে শ্রেণি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা বইয়ের নানা ভুল সংশোধন করে নেবেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ মশিউজ্জামান বলেন, কোন শ্রেণির কোন বইয়ের কত নম্বর পৃষ্ঠায় কোন ভুলটি আছে, সেসব ভুলগুলোকে একসঙ্গে করে বিস্তারিতভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও আমরা সেভাবে নির্দেশনা পাঠাব যেন শিক্ষকরা সেই ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বইয়ে ওই সংশোধন করে নেন।
সনাতন পদ্ধতিতে এই সংশোধন প্রক্রিয়া কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন শিক্ষা গবেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, ওই চিঠি প্রদান করলে হয়তো তা বাক্সেই পড়ে থাকবে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা সচেতন হলেও ওই চিঠি হাতে নিয়ে তো তিনি শ্রেণিকক্ষে যাবেন না। মোটামুটি সবার হাতেই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল থাকে। তাই ডিজিটাল টেক্সবুকে সংশোধন আগে করা জরুরি বলে মনে করি। সেটা করলে সারা দেশে অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবে।
শিক্ষক প্রতিনিধিরা বলছেন, প্রতিবছরই মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতিসত্তা বিষয়ে ভুল কি শুধুই ভুল নাকি ইচ্ছাকৃত তা তদন্ত করে বের করতে হবে।
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, কিছু কিছু ভুল আমাদের হৃৎপি-ে আঘাত করে। যেমন- মহান মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের জাতিসত্তার মতো বিষয়গুলোতে যদি ভুল থাকে, সেটা ইচ্ছাকৃত কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখার অবকাশ রাখে।
পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সব স্তরে সংশ্লিষ্ট শ্রেণি শিক্ষককে সম্পৃক্ত করার দাবি তাদের।